জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ আগস্ট ৪, ২০১৮ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 566 বার
‘চারজন বোনকে আর কজন ছেলেকে আওয়ামী লীগ অফিসে আটকে রাখা হয়েছে’,আবার ‘এক শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলেছে, আরেকজনকে আওয়ামী লীগ অফিসে ধরে নিয়ে গেছে’-এমন গুজব ছড়িয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করেছে একটি কুচক্রী মহল। আর এই উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষার্থীরা ছুটে এসে আজ শনিবার ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে পাথর, ইট-পাটকেট নিক্ষেপ করে হামলা চালায়। হামলাকারীদের কয়েক জনের হাতে লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার দুপুর আড়াইটার দিকে এক শিক্ষার্থীকে মেরে ফেলার গুজব শুনে সাইন্সল্যাব এলাকা থেকে কিছু শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ হয়ে ধানমন্ডিতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ের দিকে ছুটে যায়। এসময় কার্যালয় লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে শিক্ষার্থীরা। তখন কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বের হয়ে তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। এতে আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। একদল আন্দোলনকারী ছাত্র পার্টি অফিসের দিকে আসতে থাকলে ঝামেলা বাঁধে। ছাত্ররা হঠাৎ করে জিগাতলা মোড় থেকে আসতে থাকে। তখন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়। ছাত্ররা বাধা না মানলে বাক-বিতণ্ডা হয়। ছাত্রছাত্রীরা স্লোগান দিয়ে পার্টি অফিসের দিকে এগুলে পার্টি অফিসে অবস্থান করার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দেয়। ধাওয়ার মুখে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে সীমান্ত স্কয়ার এলাকায় অবস্থান নেয়। কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীরা আবার এগোতে চাইলে আওয়ামী লীগকর্মীরা ফের তাদের ধাওয়া দেয়।
এদিকে, সংঘর্ষের সময় গুলি ছোড়ার দাবিও করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ। তবে কারা গুলি ছুড়েছে তা তারা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বিকাল ৫টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল। শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব এলাকায় ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সীমান্ত স্কয়ারের (সাবেক রাইফেলস স্কয়ার) সামনে অবস্থান করছেন। আর পুলিশ অবস্থান নিয়েছেন ঝিগাতলা মোড়ে।
এর আগে ঝিগাতলা এলাকায় সকাল থেকে ওই এলাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী সেখানে অবস্থান নেয়। বেলা দুইটার দিকে বিজিবি গেটের সামনে শত শত শিক্ষার্থীর একটি অংশের ওপর হঠাৎ করে হেলমেট পরা, লাঠি হাতে ২৫ থেকে ৩০ জনের একদল যুবক হামলা চালায়। তাদের একজনের হাতে অস্ত্রও দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ওই সময় বিজিবির সদস্যরা গেট থেকে সামনে এসে যুবকদের থামানোর চেষ্টা করেন।
একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ও হামলাকারীরা একে অপরের দিকে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করে। এরপরই শুরু হয় গুজব। এক শিক্ষার্থী মারা গেছে বলে মূহূর্তের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারী একজনকে আওয়ামী লীগের এক কর্মী ধরে নিয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়। পরে আন্দোলনরত ছাত্ররা হঠাৎ করে ঝিগাতলা মোড় থেকে আসতে থাকে। শিক্ষার্থীদের কারও কারও হাতে লাঠিও দেখা গেছে।
এদিকে গুজব এর ব্যাপারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন,আওয়ামী লীগের ধানমণ্ডি পার্টি অফিসে কাউকে আটক রাখা হয়নি। তারা বলেন, আমাদের কে বলা হয়েছিল চারজন মেয়েকে আটকে রাখা হয়েছে। এবং ছেলেদের ভিতরে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। কিন্তু আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে সেখানে কেউ নেই। মারধরের বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব।
শনিবার সন্ধ্যায় ধানমণ্ডিস্থ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে তারা এ দাবি করেন।
তারা বলেন, আমরা প্রেস কনফারেন্সে বলে এসেছি। এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। আমরা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিপক্ষে না, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগেরও বিপক্ষে না। আমাদের ৯টা দাবি সেটা মেনে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার প্রক্রিয়া চলছে। তবে কালকের মধ্যে আমাদের দাবি মানতে হবে। আর আমাদের শিক্ষার্থীদের যেন মারধর না করা হয়। তবে আজকের জন্য কার্যক্রম বন্ধ বলে জানান তারা।
Leave a Reply