নকল ও ত্রুটিপূর্ণ মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের মালিক আওয়ামী লীগ নেত্রী শারমিন জাহানকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে সমকালকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ শাখার উপ-কমিশনার ওয়ালিদ হোসেন।

ডিবির রমনা জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিশু বিশ্বাস সমকালকে বলেন, ত্রুটিপূর্ণ মাস্ক সরবরাহের অভিযোগে রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে শারমিন জাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শারমিন জাহানকে আসামি করে মামলা করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোজাফফর আহমেদ বাদী হয়ে এই মামলা করেন। শারমিন জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-১ শাখায় সহকারী রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত।

বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা ইউনিটে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের জন্য এন-৯৫ মাস্ক দেওয়ার কথা বলে নকল মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে। প্রথম দুই দফায় দেওয়া হয় নিম্নমানের মাস্ক। তবে তাতেও তারা কাজ চালিয়েছেন। তবে তৃতীয় দফায় দেওয়া হয় নকল এন-৯৫ মাস্ক। এই মাস্কের কারণে করোনার সম্মুখ যোদ্ধাদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে।

মামলার বাদী বিএসএমএইউ এর প্রক্টর মোজাফফর আহমেদ এজাহারে বলেছেন, ১১ হাজার মাস্ক সরবরাহের জন্য অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনালকে গত ২৭ জুন কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তারা ৩০ জুন প্রথম দফায় এক হাজার ৩০০, ২ জুলাই দুই দফায় মোট এক হাজার ৪৬০ এবং ১৩ জুলাই চতুর্থ দফায় ৭০০ মাস্ক সরবরাহ করে। তাদের প্রথম দুই দফার চালানে কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। তবে পরের দুই দফায় লট বিতরণ ও ব্যবহারে ত্রুটি পাওয়া যায়। মাস্কের গুণগত মানও চাহিদা অনুযায়ী ছিল না। কোনো মাস্কের বন্ধনি ফিতা ছেঁড়া, কোনোটির ছাপানো লেখায় ত্রুটিপূর্ণ ইংরেজি ছিল। প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে যাচাই করে মাস্কের নিরাপত্তা কোড ও লট নম্বর নকল বলে জানা যায়। এ কারণে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী শারমিন জাহানকে গত ১৮ জুলাই কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তিনি ২০ জুলাই দেওয়া জবাবে দুঃখ প্রকাশ করেন, যা দোষ স্বীকারের শামিল। মামলায় তার বিরুদ্ধ সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গ্রেপ্তারের আগে অভিযুক্ত শরামিন জাহানের দাবি করেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। কোনো নকল মাস্ক তিনি সরবরাহ করেননি। বিএসএমএমইউয়ের একজন সহকারী পরিচালক সেগুলো যাচাই করে নিয়েছেন। ত্রুটি থাকলে তারা বদলে দেওয়ার কথা বলতে পারতেন। তখন কিছু না বলে এখন তারা মামলা করেছেন। তাছাড়া মাস্কগুলো তার প্রতিষ্ঠান তৈরি করেনি। অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে এনে সরবরাহ করা হয়েছে।

কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে দুঃখ প্রকাশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি ভুল বোঝাবুঝির পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। মাস্ক সরবরাহের জন্য নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করা শারমিন জাহান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। সর্বশেষ তিনি আওয়ামী লীগের মহিলা ও শিশুবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।