নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও সদর উপজেলায় লকডাউন কার্যকর করার নামে সরকার সমর্থক একদল যুবকের বিরুদ্ধে গাড়ি ভাঙচুর, সড়কে যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, এমনকি চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। মাইজদী বাজার ও সোনাপুর সড়কের বেশ কয়েকটি জায়গায় স্বঘোষিত এই স্বেচ্ছাসেবকরা সারা দিনে আজ আটটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
এছাড়াও বেগমগঞ্জের চৌমুহনীতে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রাম -মজুচৌধুরীর হাট( লক্ষীপুর) রুটের বাস আটকিয়ে চালক এবং যাত্রীদেরকে হয়রানী করা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে নোয়াখালীর ‘রেড জোনে’ বেগমগঞ্জ ও সদর উপজেলায় লকডাউন শুরু হয়েছে। এই লকডাউন আগামী ২৩ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। লকডাউন বাস্তবায়নে নোয়াখালী ৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী স্থানীয় যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন।

লকডাউন শুরু হওয়ার পর আজ পুলিশের চৌকির পাশাপাশি সরকার সমর্থক যুবককে পথে লাঠি হাতে অবস্থান নিতে দেখা যায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সরকারি গাড়ি, প্রাইভেট কার, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। সড়কে দিনভর এভাবে নৈরাজ্য চললেও পুলিশ ছিল কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের গাড়ী ভাংচুরের ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

ন্যাশনাল ব্যাংক মাইজদী কোর্ট শাখার ব্যবস্থাপক আক্তার হোসেন জানান, বেলা ১১টার দিকেব্যাংকের লগোসম্বলিত একটি গাড়ি ব্যাংকের কাজে সোনালী ব্যাংক মাইজদী প্রিন্সিপাল শাখার দিকে যাচ্ছিল। গাড়িটি নোয়াখালী পৌর বাজার অতিক্রম করার সময় স্বঘোষিত কিছু স্বেচ্ছাসেবক গাড়িটি আটকে ভাঙচুর করে। গাড়িটি সোনালী ব্যাংকে না গিয়ে পরে ন্যাশনাল ব্যাংকে ফিরে আসে।

ঘটনাটি ম্যানেজার স্থানীয় সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী ও নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেনকে অবহিত করেছেন।

স্বঘোষিত এই স্বেচ্ছাসেবকরা স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জুয়েলের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছেন। জুয়েল অভিযোগ করে বলেন, ‘পৌর বাজারের সামনে আমার মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। সুবর্ণচর উপজেলার ব্যবসায়ী মেসার্স নূরানী গ্রুপের পণ্যবাহী একটি গাড়ির চালক জানান, তিনি গাড়িতে মাল নিয়ে মাইজদী যাওয়ার পথে লকডাউন বাস্তবায়নকারী একদল যুবক গতি রোধ করে পাঁচ শ টাকা চাঁদা দাবি করেন। সঙ্গে টাকা না থাকায় গাড়ি ঘুরিয়ে সুবর্ণচরে ফিরে আসতে হয়েছে।

সোনাপুর থেকে মাইজদী আসার পথে দত্তেরহাট এলাকায় সাংবাদিকের মোটরসাইকেল আটকে চাবি কেড়ে নিয়ে তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করা হয়। পরে স্বেচ্ছাসেবকদের একজন নেতা সাংবাদিককে চিনতে পেরে মোটরসাইকেলের চাবি দিয়ে যান।

এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন এ ধরনের কিছু অভিযোগ থাকার কথা জানান। তিনি বলেন, বুধবার সকাল থেকে এ ব্যাপারে পুলিশ কঠোর ভূমিকা পালন করবে। ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির ব্যাপারে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারা লিখিত অভিযোগ দিলেই মামলা নেওয়া হবে।

গাড়ী ভাংচুর এবং সাধারন জগগনকে হয়রানীর ব্যাপারে নোয়াখালী ৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর মুঠোফোনে চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।