অপরাধ সংবাদ | তারিখঃ ডিসেম্বর ২০, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 839 বার
রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী এলাকায় বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন আনসার আল ইসলামের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব -৪। গ্রেফতারকৃতরা হলো মোহাম্মদ আরিফুল করিম চৌধুরী ওরফে আদনান চৌধুরী, মেহেদী হাসান শাকিল ওরফে বাবু, আব্দুল আল মামুন ওরফে আসাদুল্লাহ হিল গালিব এবং নাজমুল হাসান।
গতকাল কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক জানান, গ্রেফতারকৃতদের শরীর ও সাথে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে উগ্রবাদী সংগঠনের বিভিন্ন ধরনের বই, লিফলেটসহ উগ্রবাদী ডিজিটাল কনটেন্ট, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স সার্কিট, ডিভাইস, ব্যাটারি ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতদের মোবাইল ফোনসেটের ফরেনসিক পরীক্ষা করে কিছু পরিকল্পনার কথা জানা গেছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বিশেষ করে পুলিশের উপর হামলার পরিকল্পনার করেছিল। কোনো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নয়, বরং চাপাতি দিয়ে পুলিশ সদস্যদের টার্গেট করে হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। আর হামলার সময় কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস বা ফোন ব্যবহার না করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। দুই-তিনজন মিলে আলাদা গ্রুপে ভাগ হয়ে পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে পুলিশের উপর অতর্কিত হামলা করে পালানোর পরিকল্পনা করছিল। গত তিন মাসে এই গ্রুপের ২৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
গ্রেফতার আরিফুল করিমের বাড়ি চাঁদপুরে। তিনি কম্পিউটার সাইন্সে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা শেষ করে একটি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অনলাইনে কম্পিউটারের সামগ্রী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহের ব্যবসা করছিলেন। এক সময় তিনি নিষিদ্ধ উগ্রবাদী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ২০১৫ সালে খিলগাঁও এলাকা থেকে তিনি গ্রেফতার হন। গ্রেফতার হওয়ার পর ব্যাংক তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। জোরালো তৎপরতার কারণে সংগঠনের ঢাকা অঞ্চলের একাংশের শীর্ষস্থানীয় আমির পদ পান। ফেসবুকে সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ নেতা বর্তমানে কারান্তরীণ আব্বাস উদ্দিন ওরফে শুকুর আলীর সাথে পরিচিত হয় এবং তার মাধ্যমে উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রমে আরো তৎপর হয়। পরে অনলাইনে বিভিন্ন আইডি থেকে উগ্রবাদ সংক্রান্ত পোস্ট ডাউনলোড করে এবং বিভিন্ন উগ্রবাদীর সাথে পরিচিত হয়। প্রায় তিন বছর ধরে এই সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন।
গ্রেফতার মেহেদী হাসান শাকিলের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। বর্তমানে প্যারামেডিক্সে অধ্যয়নরত। সে আব্বাস উদ্দিন ওরফে শুকুর আলীর সাথে আপসের মাধ্যমে আনসার আল ইসলাম সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন। তাদের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে দলে যোগদান করে। প্রায় দুই বছর ধরে সংগঠনের সাথে জড়িত। ম্যাসেঞ্জার ও ইমো এবং বিভিন্ন ছদ্ম নামে আইডি ব্যবহার করে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদ কার্যক্রম চালাচ্ছিল।
গ্রেফতার আব্দুল আল মামুনের বাড়ি চাঁদপুরে। সে আলীম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। জেলে থাকা আব্বাস উদ্দিনের সাথে ফেইসবুক, ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে তার প্রথম পরিচয় হয়। এরপর উগ্রবাদী সংগঠনের সাথে পরিচিত হয় এবং তাদের কার্যকলাপে আগ্রহী হয়। পরে তিনি কুমিল্লা অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় আব্বাস উদ্দিনের মাধ্যমে উগ্রবাদে দীক্ষা নেয়। বিভিন্ন উগ্রবাদ সংগঠনের ভিডিও, বইপত্র, মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে সংগ্রহ করতেন। প্রায় দুই বছর ধরে সে সংগঠনের সাথে জড়িত।
গ্রেফতার নাজমুল হাসানের বাড়ি মাগুরায়। একটি ডেভেলপার কোম্পানিতে চাকরি করছিলেন। অনলাইনে তিনি ছদ্ম নাম ব্যবহার করে উগ্রবাদ সংগঠনের কার্যক্রম চালাতেন। এবিটির শীর্ষস্থানীয় মেহেদী হাসান শাকিল ওরফে বাবু তাকে দাওয়াত দেয় এবং বিভিন্ন বই, লিফলেট ও ভিডিও সরবরাহ করে। সংগঠনের প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপস হাতে কলমে শিক্ষা নেয়। প্রায় তিন বছর ধরে এই সংগঠনের সাথে জড়িত। শীর্ষ উগ্রবাদের মধ্যে সে একজন। তার কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী ডিজিটাল কন্টেন্ট পাওয়া গেছে।
Leave a Reply