সুবীর নন্দী, বারী সিদ্দিকী, শাহনাজ রহমতউল্লাহ, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, ফকির আব্দুর রব শাহ ও আইয়ুব বাচ্চু- বাংলা সংগীতের এই ছয় কিংবদন্তিকে উৎসর্গ করে শুরু হলো ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট ২০১৯’। এই ছয় মহারথীর উপর নির্মিত একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। বৃহস্পতিবার (১৪ই নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে সান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ও সান কমিউনিকেশনস লিমিটেডের আয়োজনে সূচনা ঘটে লোকসংগীতের তিনদিনের এ মহা উৎসবের। প্রেমা ও তার দল ‘ভাবনা’র নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হয়। তাদের নৃত্যের তালে তালে আর্মি স্টেডিয়ামে এবারের ফোক ফেস্টিভালের শুরুটা রঙিন হয়ে ওঠে।

সামিনা হোসেন প্রেমার পরিচালনায় নাচের দল ভাবনা পরিবেশন করে সিলেট অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ধামাইল নৃত্য। শুরুতেই রাধা রমনের ‘আমি রবো না রবো না গৃহে, বন্ধু বিনে প্রাণ বাঁচে না’ গানের তালে নৃত্য পরিবেশন করে দলটি। এরপর একে একে আরো বেশ কয়েকটি নাচের মধ্য দিয়ে নিজেদের পরিবেশনা শেষ করে ভাবনা।
এরপর মঞ্চে আসে জর্জিয়ার ব্যান্ড শেভেনেবুরেবি। নিজেদের কয়েকটি পরিবেশনায় দর্শকদের মুগ্ধ করে তারা । এরপর উৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ, এমপি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোকফেস্ট ২০১৯ এর শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, লোকসংগীত জীবনের কথা বলে। এই গানের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ের অব্যক্ত কথাগুলো বলা হয়। সংগীত চর্চা ও সংস্কৃতি চর্চা তরুণ সমাজকে বিপথে যেতে দেয় না। তিনি এই উৎসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এ আয়োজনে স্বাগত বক্তব্যে সান ফাউন্ডেশন ও সান কমিউনিকেশনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরী বলেন, লোকসংগীত হচ্ছে আমাদের প্রাণের গান। এই সংগীতকে আমরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই। আমরা খুব আনন্দিত যে, সারা বিশ্বের মানুষ এখন আমাদের এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। তিনি অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এবং দর্শকদের সান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের ফাউন্ডার চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার বলেন, আয়োজকদের ধন্যবাদ বাংলার লোকসংগীতকে এগিয়ে নেয়ার জন্য। ঢাকা ব্যাংক খুবই আনন্দিত এই আয়োজনে যুক্ত হতে পেরে। সম্মানিত অতিথি হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবুল কালাম আব্দুল মোমেন, এমপি, বলেন, লোকসংগীত আমাদের হাসি বেদনার বহিঃপ্রকাশ। এ গানের সম্পর্ক আমাদের নাড়ির সঙ্গে। সকল দেশি বিদেশি লোকসংগীতশিল্পীকে এবং আয়োজকদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। তারপর মঞ্চে আসেন বাংলাদেশের ফোক গানের বিশিষ্ট শিল্পী শাহ আলম সরকার। তার পরিবেশিত একের পর এক লোকগানে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। এরপর হালকা শীতের রাতে নিজের পরিবেশনা নিয়ে হাজির হন প্রথম দিনের অন্যতম আকর্ষণ ভারতের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী দালের মেহেন্দী। নিজের শ্রোতাপ্রিয় কয়েকটি গান পরিবেশন করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, এবারের আসরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ছয়টি দেশ থেকে দুই শতাধিক শিল্পী ও কলাকুশলী অংশ নিচ্ছেন। এরমধ্যে অন্যতম শিল্পীরা হলেন ভারতের দালের মেহেন্দী, পাকিস্তানের জুনুন ও হিনা নাসরুল্লাহ, রাশিয়ার সাত্তুমা, জর্জিয়ার শেভেনেবুরেবি এবং মালি থেকে আগত হাবিব কইটে অ্যান্ড হামাদ। আর বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য শিল্পীরা হলেন শাহ আলম সরকার, মালেক কাওয়াল, কাজল দেওয়ান, ফকির শাহাবুদ্দিন, চন্দনা মজুমদার, কামরুজ্জামান রাব্বি, শফিকুল ইসলাম, প্রেমা ও ভাবনা নৃত্যদল প্রভৃতি। উৎসবটি সরাসরি সম্প্রচার করছে মাছরাঙা টেলিভিশন।