পাবনার ঈশ্বরদীতে এক কলেজছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ এবং সেই দৃশ্যের ছবি ও ভিডিওচিত্র মোবাইল ফোনে ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে উপজেলার সাহাপুর পূর্বপাড়া গ্রামের সদ্যবিবাহিত মেয়েটির জীবন। ভেঙে যেতে বসেছে তার সংসার। পাঁচ মাস আগের ধর্ষণের ওই ভিডিও ও ছবি সম্প্রতি প্রকাশের পর এরই মধ্যে তাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে স্বামী। বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনার হোতা মেহেদী হাসানসহ তার ১২ বন্ধুকে গ্রেপ্তার করেছে ঈশ্বরদী থানা পুলিশ।

শনিবার রাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল আইনে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে পাবনা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- সাহাপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের মানজুর রহমানের ছেলে মেহেদী হাসান, রেজাউল মণ্ডলের ছেলে রাজিব মণ্ডল, আজিজুল ফকিরের ছেলে রাসেল, দিয়াড় সাহাপুর গ্রামের মৃত আক্তার হোসেনের ছেলে রাব্বি হোসেন, তরিকুল ইসলামের ছেলে শিহাব হোসেন, কেদু সাহার ছেলে শামিম হোসেন, সোলাইমান হোসেনের ছেলে সৈকত হোসেন, রাজ্জাক শেখের ছেলে রাজু আহমেদ, সাহাপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে শফিউল ইসলাম সালমান, দেবেন মহলদারের ছেলে ইমন আলী, সাঁড়াগোপালপুর নতুনপাড়ার ইরকোন এলাকার আশরাফুল ইসলামের ছেলে মো. আশিক ও মাহাবুল হোসেনের ছেলে মাহফুজ আহমেদ।

মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ জুন বাড়ির সামনে একা পেয়ে প্রথমে ফুসলিয়ে ও পরে অস্ত্রের মুখে মেয়েটিকে জিম্মি করে মেহেদী হাসান। এরপর মেয়েটিকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ এবং বন্ধুদের সহায়তায় গোপনে ওই ধর্ষণের ছবি ও ভিডিওচিত্র ধারণ করে। গত ২৮ আগস্ট সাঁড়াগোপালপুর গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে পারিবারিকভাবে মেয়েটির বিয়ে হয়। বিয়ের পর আবারও তাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল মেহেদী। মেয়েটি এতে রাজি না হওয়ায় ওই ছবি ও ভিডিওচিত্র বন্ধুদের মাধ্যমে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয় সে। তা পাঠানো হয় মেয়েটির স্বামীকেও।

এ ঘটনা জানাজানি হলে গত শনিবার রাতে মেয়েটির বাবা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে উপজেলার মহাদেবপুর, দিয়াড় সাহাপুর, সাহাপুর ও সাঁড়াগোপালপুর ইরকোন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জড়িত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ঈশ্বরদী সার্কেল) মো. জহুরুল হক জানান, বিয়ের আগে থেকেই ওই মেয়েকে বখাটে মেহেদী নানাভাবে উত্ত্যক্ত করত।

ঈশ্বরদী থানার ওসি বাহাউদ্দীন ফারুকী জানান, অভিযোগ পেয়েই অভিযুক্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, পর্নোগ্রাফি ও ডিজিটাল আইনে মামলা নথিভুক্ত করে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।