নানা জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ১৬ বছর পর আসছে ২০ অক্টোবর রোববার নোয়াখালীর গুরুত্বপুর্ন বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীরা তোড়জোড় শুরু করলেও নতুন কমিটি গঠন নিয়ে বর্তমানে দলে অনুপ্রবেশকারীদের দাপটে দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতা -কর্মীদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। এখানে দলের মধ্যে বর্তমানে কোন্দল চরমে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে দলে-দলে সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনা ও ঘটেছে।সন্মেলনে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি ও জেলা পরিষদ এর চেয়ারম্যান ডাঃ এবিএম জাফর উল্যাহ ও চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সল এর নামশোনা যাচ্ছে। সাধারন সম্পাদক পদে শুধুমাত্র একজন বর্তমান সাধারন সম্পাদক মামুনুর রশিদ কিরন এমপির নামশোনা যাচ্ছে। জানা যায়, বিগত ২০০৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন সংঘাত সংঘর্ষের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় পরিস্থিতির আলোকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমঝোতার মাধ্যমে জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডাঃ এবিএম জাফর উল্যাহকে সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মামুনুর রশিদ কিরনকে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচীত করেন।
সে থেকে দীর্ঘদিন নানা প্রতিকুলতা পেরিয়ে ১৬ বছর পর অবশেষে ২০ অক্টোবর রোববার বেগমগঞ্জ সরকারি কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সকাল ১০টায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সে লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সন্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেক কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ এমপি,প্রধানবক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপমন্ত্রি এনামুল হক শামীম এমপি, সন্মেলনের উদ্ভোধন করবেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি খায়রুল আলম সেলিম, বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ডা.এবিএম জাফর উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক মামুনুর রশিদ কিরন এমপির পরিচালনায় সন্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেক জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরী এমপি, বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বাদশাসহ কেন্দ্রীয়,জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতৃবৃন্দ। সম্প্রতি কেন্দ্রের নির্দেশনার পরও ৩ বার তারিখ পিছিয়েছে বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন ।
বেগমগঞ্জ উপজেলায় ১৬টি ইউনিয়ন ও একমাত্র চৌমুহনী পৌরসভা রয়েছে। এতে প্রত্যেক ইউনিয়নে ৩১ জন করে ১৬ ইউনিয়নে ৪৯৬ জন কাউন্সিলর, চৌমুহনী পৌরসভায় ৩১ জন কাউন্সিলর, বিশেষ ১৫ জন কাউন্সিলর এবং উপজেলা কমিটির ৫৫ জন সহ মোট ৫৯৭ জন কাউন্সিলর তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে ৩ বছরের জন্য বেগমগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচীত করবেন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উপজেলায় সর্বত্র উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিগত ২০০৩ সনে ২২ সেপ্টেম্বর তারিখে সম্মেলনে বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মামুনুর রশিদ কিরনের নেতৃত্বে চৌরাস্তা থেকে একটি বিশাল মিছিল নিয়ে চৌমুহনী গণমিলনায়তনে বর্তমানে পাবলিক হলে আসার পথে বেগমগঞ্জ পোলের গোড়ায় আসা মাত্র গণিপুর থেকে একদল লোক স্বয়ংক্রিয় ও ধারালো অস্ত্র এবং বোমা বহন করে এলোপাতাড়ী ভাবে মিছিলে হামলা চালায়। এতে মামুনুর রশিদ কিরন কোন মতে প্রাণে বাঁচলেও বর্তমান ৮ নং বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি কামাল হোসেন মেম্বার ও সাধারণ সম্পাদক বাহার উদ্দিন মেম্বার সহ শতাধিক নেতাকর্মী বোমা ও গুলি এবং ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়। ঐ দিনের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামীলীগের বর্তমানে প্রেসিডিয়াম সদস্য তোফায়েল আহাম্মদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি সহ নোয়াখালী জেলা ও সকল উপজেলার নেতৃবৃন্দ। ঐ দিনই সম্মেলনে সমঝোতার মাধ্যমে ডাঃ এ.বি.এম জাফর উল্যাকে সভাপতি এবং মামুনুর রশিদ কিরণ কে সাধারণ সম্পাদক ঘোষনা দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা চলে যান। সে থেকে বিএনপি ও তত্বাবধায়ক সরকারের শাসন আমলে আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী নানা নির্যাতনের শিকার হন। এর পর ২০০৯ সাল থেকে বার বার তারিখ পরিবর্তন করেও অদ্যাবদি নানান প্রতিকুলতার কারনে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি বলে দলীয় সূত্র জানায়।
নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দীর্ঘ ১৬ বছর ইউনিয়ন থেকে শুরু করে বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠন গুলোর সন্মেলন না হওয়ায় এখানে বর্তমানে দলের চেইন-অপ কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে।ফলে বেগমগঞ্জ আওয়ামীলীগ ব্যাক্তিকেন্দ্রিক ও ক্যাডার ভিত্তিক দলে পরিনত হয়েছে। এ সুযোগে বিভিন্ন দল থেকে একশ্রেনীর সুযোগ সন্ধাণীরা আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গসংগঠনে কৌশলে ঢুকে পড়ে টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজি. থানার দালালী, মাদকব্যাবসা ও সরকারী জায়গা দখল করে বর্তমানে অঢেল টাকা ও আলীসান বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। বর্তমানে ওইসব অনুপ্রবেশ কারীরা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আবারো ক্ষমতাসীন দলের পদ পেতে জেলা- উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের পেছনে দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। আসছে সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বেগমগঞ্জ আওয়ামী লীগের দূঃসময়ের কাণ্ডারি ডাঃ জাফর উল্যাও অত্যান্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ও কর্মী বান্ধব আলহাজ্ব মামুনুর রশিদ কিরন এমপিকে সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচীত করলে এখানে দল আরো চাঙ্গা হবে। তবে এক্ষেত্রে চৌমুহনী পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান পৌর মেয়র আক্তার হোসেনও সভাপতি পদে প্রতিদ্ধন্ধিতা করছেন। তৃনমৃলের ত্যাগী দলীয় নেতা-কর্মীরা হাইব্রিডমুক্ত বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দ্রæত সম্মেলন শেষ করার জোর দাবি জানান।