জাতীয় স্বদেশ | তারিখঃ অক্টোবর ১৪, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 763 বার
রাজধানীর গুলিস্তান ও সায়েন্সল্যাবে পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনায় দুই জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. মেহেদী হাসান তামিম এবং মো. আবদুল্লাহ আজমীর।
তারা উভয়েই খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন তারা নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভোলার দুর্গম চরে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফতুল্লায় একটি বাসায় বোমা তৈরির কারখানা করেন তারা।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। এর আগে গত রোববার (১৩ অক্টোবর) রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে তামিম ও আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মনিরুল ইসলাম বলেন, দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য জঙ্গিরা পুলিশকে টার্গেট করেছিল। গ্রেফতারকৃতরা নব্য জেএমবি’র সামরিক শাখার সদস্য। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ থেকে আটক ফরিদ উদ্দিন রুমির ছোট ভাই জামাল উদ্দিন রফিকের নেতৃত্বে একটি সামরিক শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। এসময় ফতুল্লায় রফিকের বাসায় বোমা তৈরির একটি কারখানা তৈরি করে।
তিনি আরও বলেন, তৈরিকৃত বোমায় গত ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে এবং ৩১ আগস্ট সাইন্সল্যাবে ইম্পোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বোমা হামলায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন। এছাড়া মালিবাগ, পল্টন ও খামার বাড়ির বোমা হামলায় ব্যবহৃত বোমা তৈরিতে বন্ধু রফিককে সহায়তা করেন।
সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, গ্রেফতারকৃতদের পরিকল্পনা এবং নেতৃত্বেই সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ওপর আইইডি হামলা করা হয়। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় তক্কার মোড়ে পরিচালিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানস্থলে তারা নিয়মিত শলাপরামর্শ করাসহ বিভিন্ন ধরনের বোমার (আইইডি) উৎকর্ষ সাধনে তৎপর ছিল। তাদের অন্যান্য সহযোগীদেরও গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি হামলার আগে টার্গেট স্থানে বারবার র্যাকি করতো। পুলিশের ওপর তাদের হামলার কারণ হচ্ছে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা। যার মধ্যে তাদের প্রথম পছন্দ ছিল আইএস। তারা আইএস’র সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিল। তবে এখনও আইএস’র সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের যোগাযোগ হয়নি।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ১টি ল্যাপটপ ও ৩টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয় বলেও জানান মনিরুল। আজ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে তাদের।
চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল রাতে গুলিস্তানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা হলে ট্রাফিক কনস্টেবল নজরুল ইসলাম, লিটন চৌধুরী ও কমিউনিটি পুলিশ সদস্য মো. আশিক আহত হন।
গত ৩১ আগস্ট মধ্যরাতে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের যাত্রাপথে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তাতে একজন এএসআই এবং একজন কনস্টেবল আহত হন।
চলতি বছর পুলিশের ওপর আরও তিনটি হামলা ও হামলা চেষ্টার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গত ২৬ মে মালিবাগে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) কার্যালয়ের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা পুলিশের গাড়িতে বোমার বিস্ফোরণ ঘটলে এসআই রাশেদা খাতুন এবং এক রিকশাচালক আহত হন।
এরপর গত ২৩ জুলাই খামারবাড়ি এবং পল্টনে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে একই সময় দুটি কার্টনে বোমার সন্ধান পায় পুলিশ। পরে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়।
প্রতিটি ঘটনার পরই মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস’র পক্ষ থেকে হামলার দায় স্বীকার করা হলেও পুলিশ বরাবরই বলেছে, এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে এ দেশীয় উগ্রপন্থি জঙ্গিরাই।
Leave a Reply