আওয়ামী লীগের চার নেতা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছিলেন। মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর তাঁদেরকে দলের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু যে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে সেই দায়িত্ব পালনেই তারা ব্যর্থ হয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী নিজেই মনে করছেন যে তারা দলের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ দেখছেন। কাজেই নির্বাচনে তাঁদের মনোনয়ন দেয়ার ফলে তাঁদের প্রতি যে সহানুভূতি আওয়ামী লীগ সভাপতির হয়েছিল সেই সহানুভুতিতে এখন ভাটার টান।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে ছাত্রলীগের উপরই শুধু ক্ষুব্ধ নন প্রধানমন্ত্রী বরং এই চার খলিফার উপরও প্রধানমন্ত্রী অসন্তুষ্ট। এই চার খলিফা হলেন- আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক।

উল্লেখ্য যে, কমিটি গঠনের জন্য এবং ছাত্রলীগের যে সিন্ডিকেট তা ভাঙার জন্য এই চার নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো এসেছে সেগুলো খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখা যায় যে, লিয়াকত শিকদারসহ অন্যদের সিন্ডিকেট ভাঙতে গিয়ে এই চার নেতাই নতুন সিন্ডিকেট করেছেন। বিভিন্ন জায়গায় কমিটি গঠন করায় তারা ভূমিকা রেখেছেন। এই সমস্ত কমিটি করতে গিয়ে যে অনিয়ম এবং বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা তাঁদের আশ্রয় প্রশ্রয়েই হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, ফরিদপুরের ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে স্থানীয় এমপির কোনো মতামতই নেওয়া হয়নি। বরং সেখানে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমানের ইচ্ছাতেই তার পকেটস্থ কমিটি করা হয়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে মাদারীপুরে।

এছাড়াও অন্যান্য জায়গায় এই চার নেতা তাঁদের পছন্দের ব্যক্তিদেরকে দিয়ে কমিটি গঠন করিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটিতেও এই নেতারা প্রভাব বিস্তার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো বলছে যে, ৭৫’র পর থেকে ছাত্রলীগকে ঘিরে নানারকম সিন্ডিকেট হয় এবং সিনিয়র নেতারা ছাত্রলীগকে কুক্ষিগত করার নানারকম চেষ্টা করেন। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ বিভিন্ন নেতার পকেটস্থ সংগঠন হিসেবেই অবহিত হত। ছাত্রলীগে গ্রুপিং, বিভক্তি ইত্যাদি সবই হত কেন্দ্রীয় নেতাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কারণেই। কেন্দ্রীয় নেতারা তাঁদের নিজস্ব বলয় তৈরি করার জন্য ছাত্রলীগে গ্রুপিং এবং বিভাজন তৈরি করতেন। নব্বই দশকে ছাত্রলীগকে নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি হয় এবং এই সিন্ডিকেটকে নিজস্ব ব্যবসা বাণিজ্যসহ নানারকম অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহার করে।

শোভন-রাব্বানীর কমিটির আগেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই সিন্ডিকেটের প্রতি আনুগত্য ছিল, দলের প্রতি নয়। শেখ হাসিনা এই কাউন্সিলের মাধ্যমে ছাত্রলীগের সিন্ডিকেট ভাঙতে চেয়েছিলেন। এজন্যই তিনি সময় নিয়ে নিজে ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেছিলেন। কিন্তু সিন্ডিকেট ভাঙার পর প্রধানমন্ত্রীর প্রাত্যহিক ব্যস্ততায় পরবর্তী সময়ে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন ও ছাত্রলীগের তদারকি করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন চার নেতাকে। যার গত নির্বাচনে বঞ্চিত হয়েছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি এই চার নেতাকে রাজনীতির মুল ধারায় সম্পৃক্ত করার একটি সুযোগও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখন ছাত্রলীগ নিয়ে যে অভিযোগের পাহাড় সেই অভিযোগের পাহাড়ে আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ চার নেতাকেও অনেকেই দুষছে।

উৎস – বাংলা ইনসাইডার