জেলা সংবাদ | তারিখঃ আগস্ট ১৯, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 944 বার
আজ ১৯ আগষ্ট গোপালপুর গনহত্যা দিবস। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের গোপলপুর বাজারে ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোষর রাজাকার, আল বদরদের সহযোগীতায় নিরস্ত্র ৫৪জন বাঙ্গালীকে ব্রাশফায়ার করে হত্যাকরে।
গণহত্যায় শহীদ হওয়া ৫৪ জনের মধ্যে ২৩ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া যায় । এরা হলো, গোপালপুরের মাহবুবুল হায়দার চৌধুরী (নশা মিয়া), মির্জানগর গ্রামের হাওলা বাড়ীর আবুবকর সিদ্দিক, আবুল কাশেম, তুলাচরা গ্রামের দিন ইসলাম মেম্বার, হাবিবুল্যাহ, ইসমাইল মিয়া, সাহাদাপুর গ্রামের অহিত উল্যাহ, মোহাম্মদ উল্যাহ, দুলাল মিয়া, আটিয়াকান্দি গ্রামের সামছুল হক মাষ্টার, মজিবুল্যাহ, বশির উল্যাহ, দেবকালা গ্রামের হারিস মিয়া, সিরাজউদ্দিনপুর গ্রামের সিদ্দিক উল্যাহ, মহবুল্যাপুর গ্রামের মনতাজ মিয়া, নুর মোহাম্মদ, আবদুল মান্নান, মমিন উল্যা, পানুয়াপাড়া গ্রামের মোবারক উল্যাহ, চাঁদ কাশিমপুর গ্রামের মোহাম্মদ উল্যাহ, দর্জি (টেইলারি দোকানের মালিক) আমিরাবাদ গ্রামের আবদুর রশিদ, বারাহী নগর গ্রামের আব্দুস ছাত্তার,
হিরাপুর গ্রামের আবদুল করিম এবং দশ গরিয়া গ্রামের ডাক্তার মোঃ সুজায়েত উল্যা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্য সহকারী। দীর্ঘ দিন যাবত গোপালপুর গণ শহীদ স্মৃতি সংসদ, উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোকজনকে সাথে নিয়ে গণহত্যার স্থলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানসহ শহীদের নামে বিভিন্ন দাবীতে সভাসমাবেশ করে আসছিলেন।
তার প্রেক্ষিতে নোয়াখালী জেলা পরিষদ প্রশাসক ডাঃ এ বি এম জাফর উল্যাহ, স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. মামুনুর রশিদ কিরন, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজ সেবক আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচছু, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও রাজনীতিবীদ এ টি এম এনায়েত উল্যাহ‘র সহযোগীতায় গোপালপুরে গণহত্যার স্থানটিতে গন শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণে জেলা পরিষদের ফান্ডথেকে প্রযোজনীয় অর্থবরাদ্দ হয় এবং উপরোক্ত বিশিষ্ট ব্যাক্তি গনের উদ্যোগে শহীদ পরিবারদের আর্থিক সহযোগিতার উদ্যোগ নেয়া হয়।
যেভাবে ঘটে মর্মস্তুদ গণহত্যা-
মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় বয়োজৈষ্ঠ্য, গণহত্যার সময় প্রাণে বেঁচে যাওয়া হাফেজ আজিজুর রহমানের ভ্যাষ্য অনুযায়ী- চৌমুহনী-লক্ষ্মীপুর সড়কের বাংলাবাজার থেকে উত্তরে বেগমগঞ্জের উপজেলার গোপালপুর বাজার। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে এই বাজার ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম রিক্রুটিং ও ট্রেণিং সেন্টার। সুবেদার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে সেখানে চলতো মুক্তিসেনাদের প্রশিক্ষন।
বেগমগঞ্জ কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থাপিত পাকিস্থানী সেনা ক্যাম্প থেকে অনতিদূরে মুক্তিযোদ্ধাদের এই শক্ত ঘাটিতে আক্রমনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে পাক আর্মিরা। প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শোনা যেতো পাকিস্থানীরা আসছে। এনিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে কিছুটা আতংক, উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ আগষ্ট সকাল সাড়ে সাতটা পৌনে আটটার দিকে গোপালপুর বাজারে প্রবেশ করে পাক আর্মি। তাদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে স্থানীয় রাজাকার নেছার, আব্দুল মতিন, বাতেন, আবু বকর ছিদ্দিক, ইসমাইল, মফিজ উল্যা। এসময় গোটা বাজার তারা ঘিরে ফেলে। বিভিন্ন অপারেশনে যাওয়ার কারণে গোপালপুর বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ডা: আনিছসহ মাত্র যে কয়েকজন ছিলেন তারাও দ্রুত বাজার ত্যাগ করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের না পেয়ে পাক সেনারা ক্ষুব্ধ হয়ে বাজারে তল্লাসী চালিয়ে দাকানী, নিরীহ পথচারী থেকে যেখানে যাকে পেরেছে তাকে ধরে এনে জড়ো করে। এসময় মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করেন এমন একটি ঘর থেকে একটি গুলির খোসা এবং মোহাম্মদ উল্যার টেইলারিং দোকান থেকে একটি বাংলাদেশের পতাকা পেয়ে পাকিস্থানীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। উন্মত্ত পাকি আর্মিরা এসময় ইউপি সদস্য দীন ইসলাম, ব্যবসায়ী ছিদ্দিক উল্যা, তাঁর দোকানের কর্মচারী হাবিব উল্যা, টেইলারিং দোকানের মালিক মোহাম্মদ উল্যা দর্জিকে বাজারের মাঝখানেই বেদড়ক পিটুনী দেয়। বাদ যায়নি মুসলিম লীগ নেতা মাহবুবুল হক চৌধুরী নসা মিয়াও।
সকাল ১০টা নাগাদ জড়ো করা প্রায় আড়াই’শ লোকের মধ্য থেকে মুসলিম নেতা নসা মিয়াসহ ৫৬জনকে বাজারের পূর্বদিকের রাস্তায় খাল পাড়ে দাঁড় করায় এবং বাজারে আগুন ধরিয়ে দেয় পাক আর্মি ও রাজাকাররা। নসা মিয়া তখন লাইনে দাঁড় করানো ৫৬জনের মধ্য থেকে তাঁদের মসজিদের ইমাম হাফেজ আজিজুর রহমান এবং পোষ্টম্যান আব্দুল মান্নানের জীবন ভিক্ষা চান পাক সেনাদের কাছে। নসা মিয়ার অনুরোধ রক্ষা করে এ’দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু নসা মিয়ার রক্ষা হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতার অপরাধে রাজাকারদের ইন্ধনে লাইনে নসা মিয়াসহ দাঁড় করানো বাকী ৫৪জনকে খালের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াতে বলে এবং একসাথে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে।
গোপালপুর গণ হত্যার ৪৮ তম বার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার বাদ জোহর গোপালপুর বাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
Leave a Reply