হাইটেক | তারিখঃ আগস্ট ১৬, ২০১৯ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 565 বার
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়ে চলেছে। সেই উন্নত ভবিষ্যৎ এর স্বপ্ন নিয়ে নির্মিত হচ্ছে স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ। বর্তমান সময়ের ইন্ডাস্ট্রি ও নিয়োগকর্তারা খুঁজছেন আইটিতে দক্ষ পেশাজীবী। আর সেই চাহিদাকে সঙ্গী করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বেশ কিছু তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কিত বিষয়। চলুন, জানি এমন কিছু বিষয় সম্পর্কে:
কম্পিউটার গ্রাফিকস
সৃজনশীল মনের প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্র গ্রাফিক ডিজাইন। অনেকেই এই আকর্ষণীয় পেশাকে কম্পিউটার গ্রাফিকস বা সিজি গ্রাফিকসও বলে থাকেন। পেশাভিত্তিক এ বিষয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো যেকোনো বিষয় থেকে আসা শিক্ষার্থী খুব সহজেই গ্রাফিকস ডিজাইন শিখে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে পারে। গ্রফিক ডিজাইন শিক্ষার্থীরা পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন শিল্পনির্দেশনা বা আর্ট ডিরেকশন, ক্রিয়েটিভ ডিরেকশন, কম্পিউটার এইডেড আর্কিটেক্ট বা ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রাফটার, ফ্যাশন ডিজাইনার, প্যাকেজ ও স্টেশনারি ডিজাইনার, বুক কভার ডিজাইনার, গেম ডিজাইনার, লোগো ডিজাইনার, প্রমোশনাল ডিজাইনার, ইউএক্স ডিজাইনার, ওয়েব টেমপ্লেট ডিজাইনারসহ আরও অনেক কিছু। এ ছাড়া ফ্রিল্যান্সার হিসেবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেস আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডটকম, গ্রাফিকরিভার, সাটারস্টক, ডিজাইন ক্রাউড, ডিজাইনহিল, ফাইবার, বিহ্যান্স, ৯৯ ডিজাইন, ক্রিয়েটিভ মার্কেট প্রভৃতি। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতেও রয়েছে গ্রাফিক ডিজাইনারের চাহিদা। গ্রাফিক ডিজাইনে আগ্রহীদের জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদের আওতায় ৪ বছরের স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও আইটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলোয় তিন থেকে পাঁচ মাস মেয়াদি ও এক বছর মেয়াদি গ্রাফিক ডিজাইন ডিপ্লোমা কোর্স চালু রয়েছে।
বিগ ডেটা সায়েন্স
যদি জানতে চান কে এখন বিশ্বে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী? উত্তরটি হচ্ছে যার কাছে যত বেশি তথ্য রয়েছে সে তত বেশি শক্তিশালী। প্রতিদিন ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে কি পরিমাণ তথ্য আদান–প্রদান হয় জানেন কি? এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, প্রতিদিন ইন্টারনেট বিশ্বে ২.৫ কুইন্ট্রিলিয়ন বাইটস তথ্যের উৎপত্তি হয়। ২০১২ সালে শুধু যুক্তরাষ্ট্রই গ্লোবাল ডেটার সিংহভাগ উৎপন্ন করত। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী ডেটার পরিমাণ ছিল ২.৮ জিটাবাইটস, যা ২০২০ সালের মধ্যে ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইন্টারনেট বিশ্বে বিপুল পরিমাণ ডেটা, তা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে নিয়ে কীভাবে কাজে লাগাবেন, সেই সমাধান দিচ্ছে বিগ ডেটা। বিগ ডেটার তিনটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে ভলিউম, ভ্যারাইটি ও ভেলোসিটি। মেশিন লার্নিং বা এনএলপি (ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং) ব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যালগরিদম থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা যায়। আপনি একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরের কোনো একক মাসের পণ্য উৎপাদন জানতে চান? বিগ ডেটা অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে দ্রুত সেই তথ্য বের করা সম্ভব। বিগ ডেটা ও বর্তমান সময়ের ক্যারিয়ার গড়ার খুব জনপ্রিয় একটি বিষয়।
সফটওয়্যার টেস্টিং
কোনো সফটওয়্যার ব্যবহারের আগে তার ফাংশনালিটি ঠিক রয়েছে কি না, যে উদ্দেশ্যে সফটওয়্যারটি নির্মিত হয়েছে, তা পূরণ হচ্ছে কি না, সফটওয়্যার রানে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না, এই বিষয়গুলো পরীক্ষা করে দেখার দায়িত্ব সফটওয়্যার টেস্টারের। সফটওয়্যার টেস্টিং ২ ধরনের হয়, ম্যানুয়াল ও অটোমেটেড টেস্টিং। আর টেস্টিংয়ের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে স্ট্যাটিক ও ডায়নামিক টেস্টিং। সফটওয়্যার টেস্টিংয়ের তিনটি আলাদা অ্যাপ্রোচ রয়েছে, হোয়াইট বক্স, ব্ল্যাক বক্স ও গ্রে বক্স টেস্টিং। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এই পেশাজীবীদের ভালো চাহিদা রয়েছে।
অ্যানিমেশন
বিশ্বজুড়েই এখন অ্যানিমেশন বা ত্রিমাত্রিক রূপের জয়জয়কার। বিজ্ঞাপন হোক কিংবা চলচ্চিত্র অথবা কোনো স্থাপত্যশৈলী, নির্মিতব্য ভবন, মেকানিজমের বাস্তবমুখী চিত্রায়ণে ব্যবহৃত হচ্ছে অ্যানিমেশন। অ্যানিমেটররা ইলাস্ট্রেশন ও সফটওয়্যারে নির্মাণ করছেন ক্যারেক্টার, ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস ও স্টপ মোশন। বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পেশাজীবী নির্মাণে অ্যানিমেশনে স্বল্প ও দীর্ঘকালীন কোর্স পরিচালনা করছেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং
যদি কেউ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হন তবে প্রথমেই যে ভাবনা মাথায় খেলা করে তা হলো শেখার শুরুটা ঠিক কোথায়? শুরুর কথা শেষে হোক। আগে জানা প্রয়োজন ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কোন বিষয়গুলো রয়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্যারিয়ারের শুরুতে চাইলে সব বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব, আবার নির্ধারিত যেকোনো একটি বিষয়ে এক্সপার্ট হওয়া সম্ভব। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে আপনার পছন্দসই বিষয় হিসেবে বেছে নিতে পারেন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, কনটেন্ট মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও), সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (এসইএম), পে-পার-ক্লিক (পিপিসি), অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ই-মেইল মার্কেটিং, রেডিও-টিভি অ্যাড, মোবাইল মার্কেটিং ইত্যাদি।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
সামাজিক ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে থাকেন। কারণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেই পণ্য বা সেবার প্রচারণা চালানো হয়। ফ্যান-ফলোয়ার, গ্রুপ, কমিউনিটিকে টার্গেট করেই পোস্ট এনগেজমেন্টের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট কনভারশন করা হয়। ক্লায়েন্টকে নতুন অফার জানানোর পাশাপাশি কম্পিটিটর অ্যানালিসিস, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাড, ক্যাম্পেইন স্ট্র্যাটেজি সবই করা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কেন্দ্র করে। এতে ন্যূনতম খরচে সর্বোচ্চ টার্গেটের মার্কেটিং ও ব্র্যান্ডিং করা সম্ভব বলে অনেকেই এই মার্কেটিং পলিসি পছন্দ করেন। তাই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে পছন্দের শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। তবে প্ল্যাটফর্ম ভেদে ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা অনুসরণ করা হয়। উদাহরণ হিসেবে ফেসবুক মার্কেটিংয়ে রয়েছে অরগানিক ও মার্কেটিং, টুইটারে করা হয় লিঙ্ক মার্কেটিং ইত্যাদি।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
কোনো ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটকে গুগলের মতো সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফলের শীর্ষে নিয়ে আসার কারিগরি কৌশলকে বলে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। ওয়েবসাইটের অসংখ্য কারিগরি দিক থাকে যেমন অনলাইন অপটিমাইজেশন বা অফলাইন অপটিমাইজেশন। এগুলোর আবার অসংখ্য রিসার্চ ও প্লেস বেজড ওয়ার্ক যেমন কি ওয়ার্ড রিসার্চ, সাইট অডিট, লিঙ্ক বিল্ডিং, এইচটিএমএল ট্যাগ কারেকশন, সাইট ক্রলিং করানো প্রভৃতি কাজ থাকে। এসব টেকনিক্যাল কাজ করে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজাররা।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে একটি অনলাইন বিক্রয় কৌশল, যার মাধ্যমে পণ্য বা সেবার মালিক তার পণ্যকে নিজের ওয়েবসাইট বা ই-কমার্স সাইটে প্রদর্শিত করে। সেই পণ্য যদি অন্য কোনো সহযোগী তার নির্ধারিত চ্যানেলের মাধ্যমে বিক্রয় করে বা প্রচার করে এবং সেই পণ্যটি যদি বিক্রি হয়, তবে যার মাধ্যমে পণ্যটি বিক্রয় হলো, সে নির্ধারিত কমিশন পেয়ে থাকে। বিশ্বে অনেক প্রতিষ্ঠানই রয়েছে যারা অ্যাফিলিয়েট সুবিধা দিয়ে থাকে, যার মধ্যে ক্লিক ব্যাংক ও আমাজন অ্যাফিলিয়েট সবচেয়ে জনপ্রিয়।
সাইবার সিকিউরিটি
জীবন যখন ইন্টারনেটে, তখন প্রতিমুহূর্তে প্রতিটি তথ্যের জন্য কেউ না কেউ ইন্টারনেটে সার্চ তো দিয়েই চলেছে। সার্চ করতে গিয়ে অনেক সাইটে নিজের অজান্তেই দিতে হচ্ছে ব্যক্তিগত ই-মেইল অ্যাড্রেস, নাম, পেশা, অবস্থান। আমাদের তথ্য প্রদান তা নিশ্চয়ই কোনো না কোনো সার্ভারে সংরক্ষিত হচ্ছে। এখন সেই সার্ভারটি যদি শিকার হয় ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার অ্যাটাকের, তখন কিন্তু আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। বর্তমান প্রযুক্তি বিশ্ব প্রতিমুহূর্তে লড়ছে। ২০১৭ সালে দুই বিলিয়ন সুরক্ষিত তথ্য সাইবার অপরাধীদের মাধ্যমে কুক্ষিগত হয়েছিল। ২০১৮ সালের প্রথমার্ধে সাড়ে চার বিলিয়নেরও বেশি সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছিল। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিবেদন অনুসারে, সেসব সাইবার নিরাপত্তাসংক্রান্ত সমস্যা যা ২০১৯ সালের পাশাপাশি ২০২০ সালের সাইবার বিশ্বে ক্রমবর্ধমান বাড়ার প্রবণতা রয়েছে। এর মধ্য রয়েছে ফিশিং, রিমোট এক্সেস অ্যাটাক, স্মার্টফোন অ্যাটাক ইত্যাদি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ নির্মাণে পরিচালনা করছে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কোর্স।
অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
প্রযুক্তির উৎকর্ষে সেই স্মার্ট ডিভাইসে ব্যবহার করছি নানা ধরনের অ্যাপ। কোনোটি সময় দেখাচ্ছে তো কোনোটি দেখাচ্ছে পছন্দসই পণ্য বা সেবা বিবরণী আবার কোনোটা খুঁজে দিচ্ছে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানা তো আবার কোনোটি ডাকছে প্রয়োজনীয় বাহন। ছবি তোলা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, ছবি এডিট এসব অ্যাপ তো রয়েছেই। রয়েছে কলার আইডেনটিটি বা কে আপনাকে ফোন করছে তা জানার অ্যাপও। এসব অ্যাপ আপনার জীবনযাত্রার মানকে করছে সমৃদ্ধ। উন্নত বিশ্বে প্রতিমুহূর্তে তাই বাড়ছে অ্যাপ ডেভেলপারের চাহিদাও।
এ ছাড়া রয়েছে ইউ-এক্স ডিজাইন, ওয়েব অ্যান্ড সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল ফিল্ম ও মিডিয়া, ইন্টেরিয়র-এক্সটেরিয়র ডিজাইনের মতো ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক বিষয়, যা প্রজন্মকে সহায়তা করছে প্রযুক্তিবান্ধব ক্যারিয়ার গঠনে। সূত্র-প্রথম আলো
Leave a Reply